জাতীয় শোক দিবস-২০২০

কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা

 

ক্রমিক

গ্রুপ ও শ্রেণি

কবিতা ও কবির নাম

সার্কুলার অনুসারে ভিডিও করে ইমুতে পাঠানোর জন্য আহ্বান করা হলো।

০১

ক-গ্রুপ: শিশু-২য় শ্রেণি

আমি হব

কবি: কাজী নজরুল ইসলাম

০২

খ-গ্রুপ: ৩য়-৫ম শ্রেণি

রৌদ্র লেখে জয়

কবি: শামসুর রহমান

০৩

গ-গ্রুপ: ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণি

শোন একটি মুজিবরের থেকে

কবি: গৌরী প্রসন্ন সিংহ

০৪

ঘ-গ্রুপ: ৮ম-১০ম শ্রেণি

নির্মলেন্দু গুণ

কবি: স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো

 

 

 

আমি হব

--কাজী নজরুল ইসলাম

 

আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম বাগে
উঠব আমি ডাকি।

 

সুয্যি মামা জাগার আগে
উঠব আমি জেগে,
হয় নি সকাল, ঘুমো এখন,
মা বলবেন রেগে!

 

বলব আমি- আলসে মেয়ে
ঘুমিয়ে তুমি থাক,
হয়নি সকাল, তাই বলে কি
সকাল হবে না ক!

 

আমরা যদি না জাগি মা
কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে গো মা
রাত পোহাবে তবে।

 

 

রৌদ্র লেখে জয়

– শামসুর রাহমান

 

বর্গি এলো খাজনা নিতে,
        মারল মানুষ কত।
পুড়ল শহর, পুড়ল শ্যামল
        গ্রাম যে শত শত।

হানাদারের সঙ্গে জোরে
        লড়ে মুক্তিসেনা,
তাদের কথা দেশের মানুষ
        কখনো ভুলবে না।

আবার দেখি নীল আকাশে
        পায়রা মেলে পাখা,
মা হয়ে যায় দেশের মাটি,
        তার বুকেতেই থাকা।

কাল যেখানে আঁধার ছিল
        আজ সেখানে আলো।
কাল যেখানে মন্দ ছিল,
        আজ সেখানে ভালো।

কাল যেখানে পরাজয়ের
        কালো সন্ধ্যা হয়,
আজ সেখানে নতুন করে
        রৌদ্র লেখে জয়।

 

শোন একটি মুজিবরের থেকে

--গৌরী প্রসন্ন মজুমদার

শোন একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণী
বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।।

এই সবুজের বুকে চেরা মেঠো পথে
আবার যে যাব ফিরে, আমার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব
শিল্পে-কাব্যে কোথায় আছে
হায়রে এমন সোনার খনি।।

বিশ্ব কবির ‘সোনার বাংলা’,
নজরুলের ‘বাংলাদেশ’,
জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’
রূপের যে তার নেই কো শেষ, বাংলাদেশ।

জয় বাংলা বলতে মন রে আমার
এখনও কেন ভাবো আবার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব
অন্ধকারে পূর্বাকাশে-, উঠবে আবার দিনমণি।।

 

স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো

--নির্মলেন্দু গুণ

 

একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে

লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে

ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে- 'কখন আসবে কবি?'

 

এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,

এই বৃক্ষে- ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,

এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।

তাহলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?

তাহলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে,

ফুলের বাগানে ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি?

জানি, সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত

কালো হাত। তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ

কবির বিরুদ্ধে কবি,

মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,

বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,

উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,

মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ...।

 

হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,

শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি

একদিন সব জানতে পারবে,- আমি তোমাদের কথা ভেবে

লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।

সেদিন এই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর;

না পার্ক না ফুলের বাগান,- এসবের কিছুই ছিল না,

শুধু একখণ্ড অখণ্ড আকাশ যে রকম, সে রকম দিগন্ত প্লাবিত

ধু-ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়।

আমাদের স্বাধীনতাপ্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশে ছিল

এই ধু-ধু মাঠের সবুজে।

 

কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে এই মাঠে ছুটে এসেছিল

কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক, লাঙল জোয়াল কাঁধে

এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে

এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক, হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে

এসেছিল মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, ভবঘুরে

আর তোমাদের মতো শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে।

একটি কবিতা পড়া হবে তার জন্য সে কী ব্যাকুল

প্রতীক্ষা মানুষের: 'কখন আসবে কবি?' 'কখন আসবে কবি?'

 

শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,

রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে

অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।

তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,

হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার

সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্র কণ্ঠ বাণী?

গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শুনলেন তাঁর অমর কবিতাখানি:

'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'

 

সেই থেকে 'স্বাধীনতা' শব্দটি আমাদের।

 

 


Post a Comment

For any query, please let us know.
We try our best to answer you.

Previous Post Next Post